অন্যের নামে লাইসেন্স, হাসপাতাল পরিচালনা করছেন আরেকজন; চিকিৎসা নয় চলছে অপচিকিৎসা

প্রকাশিত: ১১:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নে অবস্থিত আল-হেরা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হসপিটালের লাইসেন্স রফিকুল ইসলামের নামের এক লোকের নামে হলেও কিন্তু এই নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে দখল করে ক্লিনিক পরিচালনা করছে প্রভাবশালী সাইফুল ও বিল্লাল নামের দু’জন ব্যক্তি। তারা অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে। এলাকাবাসী অবৈধ ক্লিনিক বন্ধসহ চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের কাছে।

জানা যায়, ২০১৯ সালে যশোদল বানিয়াকান্দি এলাকার মৃত মাহতাব উদ্দিনের ছেলে মো: সাইফুল ইসলামের কাছে বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে আল-হেরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের ক্লিনিকটি চালু করেন রফিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে ২০২২ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করার পরিকল্পনা নিয়ে রফিক ২৫ লাখ টাকা জামানত দিয়ে ১০ বছরের জন্য বিল্ডিং ভাড়া নেয়। কিন্তু বছর দুয়েক না যেতেই রফিকুলকে সরিয়ে সাইফুল ও বিল্লাল আল-হেরার দায়িত্ব নেয়। এঘটনায় রফিকুল বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। অবৈধভাবে প্রতারণার করে মালিকানা ছিনিয়ে নেয়ায় ভুক্তভোগী রফিকুল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রফিকুলের নামে ইস্যু করা লাইসেন্স দিয়ে বর্তমানে বিল্লাল ও তার দলীয় বাহিনী আল-হেরা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হসপিটাল পরিচালনা করছে। প্রতারণার মাধ্যমে নিজের লাইসেন্স ছাড়া অন্যের লাইসেন্স দিয়ে আল-হেরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত করায় লাইসেন্স স্থগিত করে অবৈধভাবে ব্যবসা বন্ধের অনুরোধ জানান ভুক্তভোগী।

জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে কয়েকজন নিজস্ব চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা নার্সসহ জনবল থাকার কথা, তা নেই কোনোটিতেই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চলছে প্রশাসনের চোখের সামনেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম। অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই ডিপ্লোমা পাস করা প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এরপরও বছরের পর বছর চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে দালাল চক্র। ফলে উন্নত চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

বর্তমানে সাইফুল ও বিল্লালের দখলে থাকা আল-হেরা ডায়াগনস্টিকে অপচিকিৎসারও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এক রোগী ডাক্তার দেখাতে গেলে তাকে মেডিকেল টেকনিশিয়ান দ্বারা চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং ঔষধও দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী রোগী আলমগীর জানান, শারীরিক অসুস্থতা ছিল এরপর আল-হেরা ক্লিনিকে গেলে সেখানে দিলিপ বর্মণ নামের একজন আমার চেকআপসহ রিপোর্ট লিখে দেয়। রিপোর্ট করার পর উনি বিভিন্ন ঔষধ লিখে দেয়৷ এসব ঔষধ খাওয়ার পর আমার অসুস্থতা বাড়তে থাকে৷ পরবর্তীতে অভিযোগ নিয়ে আল-হেরা ডায়াগনস্টিকে গেলে বিল্ডিং মালিক সাইফুল বলে যা চিকিৎসার খরচ হয় সব তারা বহন করবে আর দিলিপ হাসপাতালের কেউ না জানান তারা।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিল্লাল হোসেন দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, রফিক ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে লাইসেন্স নবায়ন করেছি। আমাদের লাইসেন্স নেই তাই রফিক ভাইয়ের লাইসেন্সে হাসপাতাল চালাচ্ছি।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. অভিজিত শর্ম্মা দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ক্লিনিক ও হাসপাতাল শাখা থেকে। আইনগত বিষয় হওয়ায় অভিযোগ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওইখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।