শারফুদ্দীন সোহেল, ঢাকা:
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার আসামি সাবেক মন্ত্রী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু অভিযোগ করে বলেছেন, অসৎ উদ্দেশ্যে আদালতের আদেশ ছাড়াই গোয়েন্দারা কারাগারে গিয়ে আমার ভয়েস রেকর্ড করেছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ছিল কি না তিনি জানেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
আজ রবিবার (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে তিনি অভিযোগ জানান।
এসময় এই অভিযোগে নাকচ করে চিফ প্রসিকিউর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা যেকোনো আসামির ভয়েস রেকর্ড করতে পারেন, জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। চিফ প্রসিকিউটরের আদেশ দেখিয়ে বলেন, ট্রাইব্যুনালের আদেশ নিয়েই ইনুর ভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে।
এ সময় হাসানুল হক ইনু আসামির ডকে দাঁড়িয়ে বলেন, ভয়েস রেকর্ড করার সময় আমাকে ট্রাইব্যুনালের আদেশ দেখানো হয়নি।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আসামি নিজে কেন বার বার কথা বলে বিচার কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। তিনি তো আইনজীবীর মাধ্যমে তার কথা আদালতে বলতে পারেন।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা আসামির, প্রয়োজনে আসামিদের আত্মীয়-স্বজনেরও কথা শুনব।
পরে ইনুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হাসানও ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবগত করেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারাগারে ইনু সাহেবের ভয়েস রেকর্ড করতে গেলে তিনি আদালতের পারমিশন দেখাতে বলেন; কিন্তু সেরকম কিছু দেখানো হয়নি। এখন তো ভয়েস রেকর্ড নিয়ে নানা ঘটনা হচ্ছে। তাই তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না? সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
অবশ্য আইনজীবী আবুল হাসান স্বীকার করেছেন, এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ আছে।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গাজী তামিম হোসেন বলেন, ‘তদন্তের জন্য তার ভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে। আপনারা জানেন, অন্য কোনো জায়গা থেকে পাওয়া ভয়েস পরীক্ষা করার জন্য তার ভয়েস মেলাতে হয়। তাই ভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগেই ট্রাইব্যুনালের পারমিশন নেওয়া হয়েছে।'
পরে জুলাই-আগস্টে ‘হত্যা-গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের পৃথক ৭ মামলায় ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, দীপু মনি, আমির হোসেন আমু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৫ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে সময় আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এর আগে সকালে জুলাই-আগস্টে হত্যা-গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের পৃথক ৭ মামলায় আনিসুল হক, দীপু মনি, আমির হোসেন আমু, সালমান এফ রহমান, জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ৩৯ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু , কামরুল ইসলাম, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। সেই সময় আগেও আরও দুবার বাড়ানো হয়েছে।