‎জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে রেলওয়েতে চাকরি

প্রকাশিত: ৪:৪০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ।

‎জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) জালিয়াতি করে বাংলাদেশ রেলওয়ের গেটকিপার পদে চাকরি করছেন মো: নূরুদ্দীন ভূইয়া বাদল ওরফে মো: বাদল মিয়া। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জের গচিহাটা স্টেশন আউটার রেলক্রসিংয়ের গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছেন।

‎সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৩ বছর অস্থায়ীভাবে চাকরি করার পর শূন্যপদে আবেদনের ভিত্তিতে চাকরি স্থায়ী করণ হয়। বাদল ৩ বছর পূর্ণ না করেই আবেদন করে এবং চাকরি স্থায়ীকরণ করার জন্য আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে রেল দপ্তরে জমা দেন। ২০২০ সালের দিকে তার চাকরি সরকারি করণ হয়৷

‎খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাদলের এনআইডি কার্ড দু’টি। যেখানে জন্ম সালের পাশাপশি জন্মস্থানে ভিন্নতা রয়েছে। একটি কার্ডে দেখা যায় ১৯৮০ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন এবং পেশায় তিনি বেসরকারি চাকুরী করেন। আরেকটি কার্ডে বাদল উল্লেখ করে ১৯৮৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নিয়ে ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। ৭ বছর কমানোর পাশাপাশি বাবা-মায়ের নামেও আনেন ভিন্নতা। নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে তার দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র এখনও সচল। অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এভাবেই নিজের বয়স, বাবা, মায়ের নামসহ বিভিন্ন ধরনের অসত্য তথ্য দিয়ে দুই শতাধিক সরকারি কর্মচারী চাকরি করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তারা নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন রেলওয়েতে।

‎নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারের সার্ভারের ত্রুটি ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা দ্বিতীয়বার ভোটার হন। দ্বিতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই তারা চাকরিতে বহাল রয়েছেন। আরও জানা গেছে, কেউ নতুন ভোটার হওয়ার সময়ে তার আঙুলের ছাপ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ভোটার হয়েছেন কি না, তা যাচাই করা হয়। কিন্তু ২০০৭-০৮ সালে নেয়া অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ মানসম্মত না হওয়ায় তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

‎নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মরত কয়েকজন বলেন, সরকারি চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতেই তারা তথ্য জালিয়াতি করেছেন। তাদের অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস হওয়া সত্ত্বেও বয়স কমাতে ৮ম শ্রেণির সার্টিফিকেট ও জন্মসনদ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। এ চাকরি পেতে তাদের বেশির ভাগেরই টাকা দিতে হয়েছে অথবা প্রভাবশালীদের মাধ্যমে তদবির করতে হয়েছে। কিন্তু বেতন ওঠাতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করায় তারা আটকে গেছেন। এ থেকে বাঁচতে কেউ টাকা দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেছেন, আবার কেউ দুইবার ভোটার হয়েছেন।

‎এভাবে তথ্য জালিয়াতি বা তথ্য গোপন করে চাকরি পেলে তা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য সুখকর নয় বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক আহ্বায়ক সাফায়েতুল্লাহ হিমেল। তিনি বলেন, তথ্য গোপন, জালিয়াতি ও বিকৃতি করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চাকরির শুরুতেই যারা এ ধরনের কাজ করে, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা থাকতে পারে। নিয়োগকারীদের অধিকতর তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে।

‎জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির বিষয়ে বাদলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হন নি। এই বিষয়ে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

‎এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে (পূর্ব) প্রধান সংস্থাপন কর্মকর্তা জোবেদা আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‎এসব বিষয় দেখার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ফুয়াদ হাসান আনন্দের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের। আপনার মাধ্যমে বিষয়টির সম্পর্কে প্রথম জানলাম । এই অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।